হুইস্কি, সাম্বার ও একটি শনিবার
ছোটবেলা থেকেই মনে হয়েছে, আমি দেরিতে জন্মেছি। ভাগ্য ভাল, রবীন্দ্রনাথ প্রচুর আগে জন্মে গেছিলেন, কলকাতায় থেকে এদিক ওদিক ঘুরে প্রচুর অভিজ্ঞতা লাভ করে প্রচুর লেখায় প্রচুর জ্ঞান-বর্ষণ করে গেছেন। বাঁশটা খেলাম আমরা। ছোটবেলা থেকেই এত রবীন্দ্র-জয়ন্তী, নজরুল-জয়ন্তী, আবার স্কুলে গিয়ে নিজের বাবাকে ছাড়া আরেকজনকে ফাদার বলে ডাকা – মাঝে মাঝে ভাবতাম, আমি কি কনভেন্ট দিয়ে মোটামুটি ঘ্যাঁট? ব্যাপারটা অনেকটা ভাজা বড়ি দিয়ে ঘ্যাঁট করার মত - কনভেন্টে ভেজে, রবীন্দ্র-নজরুল সংস্কৃতির তেলে হালকা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এবার তুমি নিজে বুঝে নাও কী হবে। আরেকটু বড় হওয়ার পর হঠাৎ তখন দেশে গ্লোবাল হওয়ার চিন্তাধারা শুরু হচ্ছে। সময়টা জাস্ট একটু ওলট-পালট করে নেওয়া যাক। রবি যদি বিংশ কিম্বা একবিংশ শতাব্দীতে জন্মাতেন, তাহলে কি তিনি কবিগুরু হতেন? হয়তো না, দুটো প্রজন্ম পরে ছেলেপিলে হয়তো রবীন্দ্র-র্যাপ গাইত। যাইহোক, যেটা বলছিলাম, ওই দেরিতে জন্মানোর ব্যাপারটা।
গ্লোবালাইজড হওয়ার চক্করে চার বছর একটা ছোট্ট মেশিন নিয়ে পড়ে গেলাম, অনেকটা স্বর্ণ-গোলকের মত, ছুঁলেই(এক্ষেত্রে, শিখলেই) নৌকরি-ছোকরি দুটোই শিওর। এটাই নাকি মার্কেটে ‘হট’। বাবা’দের সময়ে নামের পাশে তিনটে অক্ষর লাগলেই পাড়ার সবাই চিনত, মানে B.Sc, B.Com, ইত্যাদি। মফস্বলে বা গ্রামে প্রচুর পুরনো লেটার বক্সে দেখেছিলাম লেখা আছে বড় বড় করে – গ্র্যাজুয়েট। সময় যখন আমাদের এল, একটা মেশিন নিয়ে চার বছর ঘষার পর মাত্র দুটো অক্ষর পেলাম, একটা ‘B’ আরেকটা ‘E’। অবস্থাটা এমন, যতদিন না তোমার নামের পেছনে ওই ‘B’ আর ‘E’-এর পাশে দুটো ‘I’-এর সঙ্গে কোনো অক্ষর না লাগছে, ততদিন জীবন বৃথা। ‘I’ তো লাগাতে পারলাম না, দুটো ‘I’ তো কোনোমতেই নয়। ছোট্ট যন্ত্রটার দৌলতে একটা চাকরিও জুটে গেল। বাঙালী আঠেরো হলে লুঙ্গি-বিড়ি আর একটা প্রেম অবশ্যই নামায়। গ্লোবালাইজড দুনিয়ায় লুঙ্গিটা হয়ে গেছে বারমুডা, বিড়িটা উইলস ফ্লেক আর প্রেমটা অ্যাফেয়ার। তাই কলেজে পদার্পণ করার সঙ্গে সঙ্গেই এই তিনটে জিনিস আমারও হল। বাঙালী মেয়েরা নাকি খুব স্মার্ট। সেহেতু অ্যাফেয়ার জিনিসটা টাইম-ভেরিয়ান্ট ব্যাপার। চার বছর ঘষে চাকরি পাওয়ার পর ভাবলাম আমার বেলা বোস-কে ফোন করে বলব, “Walk-in-এ আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ..., স্টার্টিং-এই ওরা 2.4 দেবে, এক বছর বাদে কনফার্মড...” – কিন্তু ততদিনে বেলা হাপিস। ওই যে বললাম গ্লোবালাইজেশান। বোধহয় আমার গ্লোবের চেয়ে অন্য কোনো গ্লোব আরো ভাল ছিল।
কলেজে আসার আগে পর্যন্ত নিরামিষাশী বলতে আমি শুধু আমার ঠাকুমাকেই বুঝতাম, যিনি বিধবা ছিলেন। দেশের যে একটা অংশ এরকমও আছে যেখানে ৩৬৫ দিনের মধ্যে হয়তো তিন দিন শুধু ডিম আর বাকি সারা বছর সো-কল্ড ‘ভেজ’ খাওয়া হয়, সেটা এই দক্ষিণে পড়তে আসার পর জানলাম। মাথায় ফুল, ফুলেল তেল, ইডলি-সাম্বার এবং ওভারওয়েট কালো মেয়ে। কেমন যেন ঘেঁটে গেল জীবনটা। দক্ষিণী বন্ধু, দক্ষিণী মেয়ে, দক্ষিণী প্রফেসর, তাদের সাথে থাকতে থাকতে আমারও ‘M’টা প্রায় ‘Yum’ হয়ে গেছিল। “ভাল আছ?” জিজ্ঞ্যেস করার জন্য আমিও মুঠি করে বুড়ো আঙুলটা উঁচিয়ে বলতাম। যাইহোক, গল্পটা যাদের নিয়ে তাদের মোটামুটি একটা ব্যাকড্রপ দিলাম। সময়টা বদলে গেছে, আমি এখন আর ঝাড়-হওয়া বেলা’র কচি খোকা নই, প্রচুর পার্টিতে প্রচুর মাল খেয়ে প্রচুর ভাট বকার সৌজন্যে আমার Resume´-তে এখন ‘Work Exp’ বলে একটা ট্যাগ আছে। এখন আমি এক্সপিরিয়েন্সড, জানিনা কিসে।
বহু বছর পরে, বিদেশের হিমেল হাওয়ায় অফিসেরই এক দক্ষিণী ছেলে হঠাৎ দৌড়ে এসে আমাকে বলল, “কাল সন্ধ্যেবেলা কি তুমি ফ্রি?” কথাটা ইংরিজিতেই বলেছিল, ভাবলাম উত্তরে বলি, “No, I charge.” তারপর ভাবলাম, এদের চেটে কোনো লাভ নেই। এমনিতেই ডাক্তাররা বলে বেশি তেঁতুল চাটলে অম্বল হয়ে যাবে। ওহ হ্যাঁ, এখন আমার একটি পার্মানেন্ট বেলা আছে। অর্থাৎ, আমি বিবাহিত। গোদা বাংলায় যাকে বলে, হাঁড়িকাঠে অলরেডি গলা দিয়েছি। যাইহোক, বউয়ের বারণ করা সত্ত্বেও টোটাল তামিলনাড়ুর সঙ্গে আমি পার্টি করতে চললাম। ঘরে ঢুকতেই একটা বিটকেল গন্ধ নাকে এসে লাগল। খুব অচেনা নয়, কারণ আমাদের কলেজের মেসে আগেরদিনের পুরনো খাবারের গন্ধটাও এরকমই ছিল। ইংরাজিটা তামিলের মত করে বলে স্বাগত জানাল ওরা। খালি-গায়ের দক্ষিণী ছেলে দেখার সৌভাগ্য খুব বেশি লোকের হয় না, যাকগে, সে নাকি তখন সবে ‘কুইক শাওয়ার’ নিয়ে বেরিয়েছে। তাকে দেখে আমার মনে হল, রবীন্দ্রনাথ একে দেখলে কালোর নানারকম শেড নিয়ে নিশ্চয়ই একটা কবিতা লিখতেন। বর্ণ-বিদ্বেষ ভাববেন না, কারণ জিনিসটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
মিনিট-দুয়েক পরে আরেকটি এনটিটি এসে যোগ দিল। আজকাল আর আমি দক্ষিণীদের না্ম জিজ্ঞ্যেস করে সময় নষ্ট করি না। বরং জিজ্ঞ্যেস করি, লোকে ওদের কী বলে ডাকে। যারা জানেন না তাদের জন্য বলে দিই, একই ট্র্যাডিশন বাংলায় থাকলে দিদি’র নাম হত – মমতা ব্যানার্জি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট কালীঘাট কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ। শুরু হল পার্টি, প্রথমবার দেখলাম কেউ পেঁয়াজ ঘষে সেটাকে চাট হিসেবে নিয়ে এসেছে। মানে, যেটা সাধারণত চোলাইয়ের দোকানে পাওয়া যায়, পেঁয়াজ-লঙ্কা-আদা সাথে লেবু মেশানো – সেটারই একটা দক্ষিণী সংস্করণ। পার্টিতে কী নিয়ে কথা বলব সেটা ভাবতেই প্রথম দু’মিনিট কেটে গেল। পরের পাঁচ মিনিট আমিই ভোকাল। পাশের ছেলেটি বলে উঠল, “How are you, yaar?” আমি কথাটার মানে জানতাম, ওর হিন্দি জ্ঞানটা এখানেই সীমিত। পেগ বানালাম, নিজের জন্য, পাশের ছেলে দুটির জন্যও। সে দেখলাম নিজের এবং বন্ধুরটা বদলে আধা-জল আধা-হুইস্কি করে নিল। তার ওপর একটা কোকের দশ টাকার টপ-আপ। অলিপাব শিখিয়েছিল, হুইস্কিতে সফট ড্রিঙ্ক মেশালে তার টেস্ট খারাপ হয়ে যায়। দেশ, সময় দুটোই বদলে গেছে, কিন্তু ওই পার্কস্ট্রীটের পাবের দীক্ষাটা আমি এখনো ভুলিনি। পরের পনেরো মিনিটে মনে হল, আমি বোধহয় তেইশ হাজার ফিটের ওপর কোনো ফ্লাইটে যাচ্ছি - চারটি দক্ষিণী ছেলে তাদের মিষ্টি ভাষায় চার রকম টোনে কথা বললে শব্দটা যে চাপা কোলাহলের একটু ওপরের মাত্রা নেয় তা প্রথমবার রিয়ালাইজ করলাম। আওয়াজটা কেমন জানেন – এই ধরুন, শীতের সকালে ঘুমের শেষ রেশটুকু আঁকড়ে পড়ে আছেন, আর পাশের বাড়ির বুড়ো কুলকুচি করেই যাচ্ছে। বাধ্য হলাম বলতে যে, ওরা যা বলছে আমি তার কিছুই বুঝছি না আর পার্টিসিপেটও করতে পারছি না।
আমার হোস্ট ফোড়ন কেটে বলল, “দু’মিনিট আগে আমি চেষ্টা করেছিলাম, তুমি তো আমার ইংরাজিতে ভুল ধরলে।” ও বলেছিল, “I am cooking anything for you.” আমি বলেছিলাম, ওটা ‘anything’ না, ‘something’ হবে। ব্যাস, দোষ হয়ে গেল। তাই সয়ে যাও যেরকম চলছে। দু’মিনিট পর আরেকটা সজারু। আমার হোস্ট বলল, ক্লাস টেনে পড়াকালীন তাকে একবার অ্যাক্টিভ থেকে প্যাসিভ ভয়েস করতে বলা হয়েছিল। And since then, he lost his voice in English. আমি বললাম, “তাহলে তুমি বাকি লোকেদের সাথে কীভাবে কথা বলো?” ওহ, বলতে ভুলে গেছি, জায়গাটা ইউনাইটেড কিংডম, মানে ইংরেজদের দেশ। এখানে তো ভিখারীরাও ইংরাজিতে ভিক্ষা চায়। সে বলল, “কাউন্টিংটা আঙুল দেখিয়ে চালাই, বাকিটা ‘sorry,’ ‘ excuse me,’ আর ‘cheers’ বলে চালাই।”
আমার সহকর্মীদের মধ্যে একজনই ভারতীয় এখানে। বাকি একজন ইটালিয়ান, একজন আইরিশ ও দুজন ব্রিটিশ। সেহেতু অফিসে চোস্ত ইংরাজি ছাড়া গতি নেই। সেই রেফারেন্স মাথায় রেখে জিজ্ঞ্যেস করলাম, “তুমি ক্লায়েন্ট কিম্বা ম্যানেজারের সঙ্গে কিরকম ভাবে কথা বলো?” সে বলল, তার ম্যানেজার এবং ক্লায়েন্ট দু’জনেই নাকি তামিলিয়ান। একেই বলে ভাগ্য অথবা গ্লোবালাইজেশান, বুঝলেন। এখানে ইংরেজদের দেশে বসে আপনার আশেপাশে চারিদিকে যেখানে একটি বঙ্গসন্তানেরও দেখা নেই, যেখানে বাড়িগুলো থেকে স্টেক-এর চেয়ে বেশি সাম্বার মশলার গন্ধ পাওয়া যায়, সেখানে ও একটি মেক-বিলিভ তামিলনাড়ু বানিয়ে বসে আছে। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করতে লাগল। আমি জানি আইরিশ হুইস্কির জন্য নয়, এটা সাম্বার মশলা এবং পাশের ছেলেটির গায়ের গন্ধের ককটেলে হচ্ছে।
বাবা বলেছিল, যেখানে থাকবে সেখানে তাদের মত করে মানিয়ে নেবে। তাই ওদের আলোচনায় নাক গলিয়ে জিজ্ঞ্যেস করলাম, “রজনীকান্তের ফ্যান ক’জন?” কলকাতার লোকেদের যেমন পলিটিক্স কিম্বা ফুটবলের হালকা আগুন দিলে একটা বড়সড় একঘন্টার আলোচনা শুরু করা যায়, এক্ষেত্রে সেটা রজনীকান্ত। আবার একটা পাঁচ মিনিটের তামিল গুনগুন। বুঝলাম এটা রজনীকান্তের নামের এক্সাইটমেন্ট। ভাবলাম, দুর শালা, আলোচনাতে আমি ঢুকব বলে রজনীকান্তের নাম নিলাম, এরা তো টপিক ঘুরিয়ে আবার তেঁতুলে ঢুকে গেল! পরের পেগটা বানাতে বানাতে একটু গলা ঝাড়া দিয়ে বললাম, “আমিও বেশ কয়েকটা তামিল ছবি দেখেছি।” নেক্সট পাঁচ মিনিট তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে একটা বড় নলেজ ট্রান্সফার সেশন চলল আমার। সারমর্ম, রজনীকান্ত ঘোড়া স্কিড করিয়ে বাসের তলা দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার সেই ঘোড়া চড়ে দৌড়ে চলে যাওয়া নাকি ঘ্যাম, এবং লম্বা চুলে রজনীগন্ধার স্টিক বসানো মোটা দক্ষিণী ভদ্রমহিলা নাকি ‘হট’। মনে মনে ভাবলাম, বেকার আমি টালিগঞ্জকে গালি দিই, নাহয় ‘হাউসফুল’ দেখতে গিয়ে একটু ঘুমিয়েই পড়েছিলাম, তার মানে কি প্রসেনজিত খারাপ? আরে বাবা, রাজ চক্রবর্তীরা আর যাই করুক, ঘোড়াকে তো আর বাসের তলা দিয়ে স্কিড করায় না। ঘড়িতে দেখলাম পৌনে এগারোটা বাজে। এখনও শেষ চেষ্টা করা যায় বাড়িতে গিয়ে ইউটিউবে বাংলা ছবি দেখতে দেখতে আরেকটা পেগ মেরে শনিবারটা বাঁচানোর। ঠিক তক্ষুণি হঠাৎ “যাও পাখি বলো, হাওয়া ছলোছলো...” ভাবলাম বোধহয় স্বপ্ন দেখছি। পৌনে তিন সেকেণ্ডে বুঝতে পারলাম ওটা আমার ফোনের রিংটোন। বউ বিদেশে বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আমার বলিউডি টোনটাকে টলিউডে চেঞ্জ করে দিয়েছে। আধ মিনিটের কল, বক্তব্য – ডিনার রেডি, এবং ‘অংশুমানের ছবি’ ইউটিউবে এসে গেছে। ফোনটা রাখার পর দেখলাম, আমার গ্লাসটা আবার ভরা হচ্ছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে কেন জানিনা, চন্দ্রবিন্দু’র একটা গান বেজে উঠল মনে মনে, “পার করে দে মা, পার করে দে মা...”।
পেগটা নিতে নিতে হেসে বললাম, “Bottoms up?” একটি ছেলে আমায় বলল, “সিগারেট আছে?” ভাবলাম, চলো, একটা ব্রেক তো অন্তত পাওয়া গেল র্যাগিং থেকে। সিগারেট ব্রেকের পর ফিরে এসে বটমস আপ তো আর হল না, কারণ পাশের ছেলেটি এর মধ্যেই চুমুকে আধখানা নামিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ জিজ্ঞ্যেস করে উঠল, “How does your wife do?” মনে মনে ভাবলাম কি পানু প্রশ্ন রে বাবা! পরে বুঝলাম ওটা ভোকাল টাইপো। ওকে বললাম, বর্তমানে বউ চাকরি করছে না, এবং সংক্ষেপে বোঝালাম কেন করছে না। আবার মাথাটা ধরে এল। পরের পাঁচ মিনিট আবার সেই গুনগুন। জিজ্ঞ্যেস করাতে বুঝতে পারলাম সামনের ছেলেটির জন্মদিন পরের সপ্তাহে। কথাটা হেব্বি বলেছিল, “He might have his birthday next week.” আমি ফোড়ন কেটে বললাম, “Is he not sure about his birthday being next week?” Northie হলে বলত, “ভাবনাওঁ কো সমঝো।” বুঝলাম ও বলতে চাইছে, পরের উইকেন্ডে ওর বার্থডে পার্টি হতে পারে। বার্থডেটা শিওর, পার্টিটা নয়।
এগারোটা পাঁচ। শেষ চুমুক মেরে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “গুড নাইট।” আমার হোস্ট জ্ঞানবৃক্ষটি বলে উঠল, “তোমার বউকে ফোন করে বলো, বাচ্চারা জেদ করছে আরেকটু থাকতে,” (ইংরাজি থেকে ট্রান্সলেশনটা এটাই দাঁড়ায়)। হেসে বললাম, “তা নয়, ওর একা থাকতে ভয় করছে নতুন জায়গায়, তাই আমি যাই।” শেষ তুরুপের তাস দিল, “দারুণ সাম্বার হয়েছে, একটু নিয়ে যাও।” মনে মনে ভাবলাম, এখন যদি সাম্বার হাতে বাড়ি ফিরি, বউয়ের কাছে state of the art খিস্তি খাব। একে তো শনিবার সন্ধ্যেটা মাটি, তারপর বহু প্রত্যাশিত ‘অংশুমানের ছবি’ দেখা শুরু করাতে এত বিলম্ব। এর ওপর যদি সাম্বার পাঞ্চ করি, একেবারে চোঁয়া ঢেকুর হয়ে যাবে। দুটো গেট পেরিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে মনে হল, ওরা কি ‘ভেজা ফ্রাই’য়ের মত আজকে আমাকে স্যাটারডে ইডিয়ট বলে নিয়ে গেছিল? হতেই পারে, ওদের কাছে একজন সো-কল্ড ‘Northie’-কে সারা সন্ধ্যে বসিয়ে দক্ষিণী ভাষায় চাটার মত আনন্দ বোধহয় খুব কম জিনিসেই আছে। বাড়ি ফিরে রুটি আর একটু সিঙ্গল মল্ট পেঁদিয়ে বিছানার একটা কোণে কুঁকড়ে শোয়ার পরে ভাবলাম, ঐতিহাসিকভাবে বাংলায় রেনেসাঁ তখনই এসেছে যখন বাংলার অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে এবং প্রবাসী বাঙালীরা ফিরে গিয়ে বাংলাকে নতুন করে গড়েছে। পরের রেনেসাঁ-টা কি আমি বাড়ি ফিরলে হবে?